স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে বাধা হতে পারে আবহাওয়া
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সেতু নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বুধবার (৯ ডিসেম্বর) রাত থেকেই স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হবে। আবহাওয়া পরিস্থিতি বুধবারের তুলনায় খারাপ না হলে সেতুর ৪১ নম্বর স্প্যানটি বৃহস্পতিবারই (১০ ডিসেম্বর) বসানো হবে।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ধূসর রঙের স্প্যানটি বুধবার রাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই-তে করে কাঙ্ক্ষিত ১২ এবং ১৩ নম্বর পিয়ারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বুধবার পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘আবহাওয়া আজকের (বুধবার) মতো থাকলেও বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) স্প্যানটি বসানো সম্ভব হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি আছে আর মাত্র একটি এবং সেটিই সর্বশেষ স্প্যান। ৪১তম এই স্প্যানটি (২-এফ) বসবে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপর। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) স্প্যানটি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে সেতুর ৪২-পি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর মহাযজ্ঞ। একইসঙ্গে দৃশ্যমান হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
এদিকে এই আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দেশে ঘন কুয়াশা থাকবে আরও কয়েক দিন। বাতাসের গতি না থাকা, শুষ্ক আবহাওয়া এবং পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তেছে, যা আরও কয়েকদিন থাকবে।
অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, শীতকালে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে এই অঞ্চলে বিশেষ করে দিল্লি হয়ে বাংলাদেশের আকাশে মেঘ আসছে। এই মেঘ যখন বাংলাদেশে আসে, তখন আর্দ্রতা কমে গিয়ে কুয়াশায় রূপ নেয়। শীতকালে যেহেতু রাতের বেলা সারফেস ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন জলীয় বাষ্প নিচে নেমে এসে কুয়াশায় রূপ নেয়। এই কুয়াশা অনেক সময় তিন-চার দিন পর্যন্ত থাকে। দিনের বেলা সূর্য ওঠার পর একটু কমে গেলেও বিকালের দিকে কুয়াশাভাব আবারও বেড়ে যায়। রাত যত বাড়বে কুয়াশা তত বাড়বে। সকালের দিকে এটি আরও বেশি বাড়বে। এই কুয়াশা কমবেশি আরও দুই-তিন দিন থাকবে।
সূত্র জানায়, মূল নদীর মধ্যে ১৫০ মিটার পর পর মোট ৪২টি পিয়ারের (পিলার) ওপর বসানো শেষ হবে মোট ৪১টি স্প্যান। প্রতিটি পিয়ারে ৬টি করে মোট ২৫২টি পাইল রয়েছে। তবে নদীর তলদেশে মাটির গঠন ও স্রোতের তীব্রতার কারণে নকশা বদল করে সেতুর মাওয়া প্রান্তে কয়েকটি পিয়ার স্থাপন করা হয়েছে ৭টি করে পাইলের ওপর। সব জটিলতা, আলোচনা, সমালোচনা, সমস্যা, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কঠিন, কিন্তু সুখকর বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতু। আগামী ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর সব কাজ শেষ হলে ২০২২ সালের মার্চেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের এই সেতু।